ছবি : কুয়াকাটা
প্রিয় ক্রিকেট ডটকমঃ কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে কিছুটা প্রশান্তির জন্য অনেকেই শীতকালীন ভ্রমণ পছন্দ করেন।আর এই দেশে বর্ষার চেয়ে শীতকালীন ভ্রমণ তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি সুবিধাজনক। শীতে ভ্রমণের জন্য দেশে বহু পর্যটন স্পট রয়েছে। এখানে তেমনি শীতকালে দেশের ভেতরে ভ্রমণের জন্য কিছু জনপ্রিয় স্থানের পরিচিতি তুলে ধরছি।
শীতে ভ্রমণের জনপ্রিয় স্থান
শীতে ভ্রমণের জন্য দেশে বেশকিছু পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে।এসব পর্যটন স্পটে শীতে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা লেগেই থাকে। বাংলাদেশে শীতকালে ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত,নিঝুম দ্বীপ, বাঘাইছড়ি, সাজেক ভ্যালি, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, জাফলং, শ্রীমঙ্গল, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশে শীতকালীন ভ্রমণের সবচেয়ে জনপ্রিয় এক পর্যটন স্পট। বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা এই সমুদ্রসৈকতে শীতকালে হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। অনেকে শীতকালে প্রতিবছরই অন্তত একবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ করেন।আসল কথা হলো শীতকালে শীতের সাথে সমুদ্রের গর্জন শুনতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে যেতে হবে।
নিঝুম দ্বীপ
এই শীতে ভ্রমণের জন্য আদর্শ এক জায়গা হতে পারে নিঝুম দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের কোলে উওর ও পঞ্চিমে মেঘনার শাখা নদী এবং দক্ষিণ ও পূর্বে নোয়াখালীর হাতিয়ায় সৈকত ও সমুদ্রবেষ্টিত ছোট সুন্দর এক জায়গা নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে এখানে শীতে হাজার হাজার পাখির আনাগোনা থাকে। এছাড়া নিঝুম দ্বীপে গেলে দেখতে পাবেন বন্যকুকুর,চিএা হরিণ প্রভৃতি প্রাণীর অবাধ বিচরণ। এছাড়া নিঝুম দ্বীপে গেলে তাজা ইলিশের দেখা পেয়ে যাবেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে নিঝুম দ্বীপ পুরোটাই প্রাকৃতিক পর্যটন স্পট।আর প্রাকৃতিক পর্যটন স্পটের ভিন্ন একধরণের আনন্দ এখানে গেলে পেয়ে যাবেন।
সাজেক ভ্যালি
শীতে ভ্রমণের এক জনপ্রিয় স্থান রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালি। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। সাজেক ভ্যালির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সৌন্দর্য হলো এর দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়া। আপনি সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে গেলে একদিনে আবহাওয়ার বহুমাত্রিক রুপবদল দেখতে পাবেন। এখানে দিনে প্রচন্ড গরম থাকলে বিকেলে হয়তো ব্যাপক বৃষ্টি দেখবেন আবার বৃষ্টির পর কুয়াশার দেখা পেতে পারেন।এটি সাজেক ভ্যালির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য যেখানে আবহাওয়া খুব দ্রুত বদলায়।এই পর্যটন স্পটের আরও একটি আকর্ষণীয় দৃশ্য হচ্ছে এর আশপাশের পাহাড়।আসল কথা হলো সাজেক ভ্যালি পুরোটাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
কুয়াকাটা
বাংলাদেশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে কুয়াকাটা অন্যতম।কুয়াকাটাকে বলা হয় দক্ষিণের সাগরকন্যা। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটা ভ্রমণের একটি আকর্ষণীয় কারণ হলো এখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে বারো ঘন্টার ব্যবধানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া কুয়াকাটার আরও কিছু আকর্ষণীয় দৃশ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এর শুঁটকি পল্লী,লাল কাঁকড়ার দ্বীপ। এছাড়া কুয়াকাটা ভ্রমণে গেলে প্রায় সারাবছরই সাগরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়বে।
জাফলং
বাংলাদেশে শীতকালে ভ্রমণের সেরা এক জায়গা সিলেটের জাফলং। জাফলংকে বলা হয় প্রকৃতির কন্যা। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত ও ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেষা এক প্রাকৃতিক পর্যটন স্পট জাফলং। এখানে পিয়াইন নদীতে নৌকা ভ্রমণ,ডাউকি ব্রিজ, উঁচুনিচু পাহাড় এক অনন্য দৃশ্য হিসেবে পরিচিত। এছাড়া জাফলং যাওয়ার পথে মেঘালয়ের সারি সারি পাহাড়ের দৃশ্য সত্যিই মনোরম।বিশেষত শীতকালে জাফলং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যিই অন্যরকম।
শ্রীমঙ্গল
শীতকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের সেরা এক জায়গা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল।ঢাকা থেকে বা সিলেট শহর থেকে শ্রীমঙ্গল যাবার সুবিধা রয়েছে।ঢাকা থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল নেমে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ঘুরতে পারেন কিংবা বাসে ঢাকা থেকে সরাসরি শ্রীমঙ্গলে নেমে অটোরিকশা নিয়ে ঘুরতে পারেন। সেইসাথে সিলেট শহর থেকে বাসে করে শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার সুবিধা রয়েছে। শ্রীমঙ্গলে দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে এখানে প্রচুর চাবাগান রয়েছে যা শীতকালে সত্যিই অন্যরকম রূপ ধারণ করে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে গেলে ঘুরে আসতে পারেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান যেখানে শত শত গাছ-গাছালি আর বন্যপ্রাণীর কোলাহল সত্যিই অন্যরকম । এরসাথে শ্রীমঙ্গলে রয়েছে সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা ( বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন)।
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত
বাংলাদেশে শীতকালে ভ্রমণের জনপ্রিয় ও সেরা এক জায়গা মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। মাধবকুন্ড জলপ্রপাত মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক জলপ্রপাত হচ্ছে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত।এই মনোরম প্রাকৃতিক জলপ্রপাত দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটকের আগমন ঘটে । মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন শিব মন্দির । এছাড়া এই জলপ্রপাতের পাশেই দেখতে পাবেন পাহাড়ি পানের বরজ। এছাড়া মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে যাবার পথে চোখে পড়বে বেশকিছু পাহাড় ও চাবাগান। সিলেট বা মৌলভীবাজার থেকে সড়কপথে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে যাওয়া যায়। সিলেট থেকে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের দূরত্ব ৭২ কিলোমিটার এবং মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার।
শীতে ভ্রমণের আগে কিছু পরামর্শ
শীতে ভ্রমণের আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ এখানে তুলে ধরছি।
১.করোনাকালিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।বাইরে বেরোলে সবসময় মাস্ক ব্যবহার করুন।
২. যেখানে ভ্রমণ করতে যাবেন সেই এলাকার নিকটস্থ হাসপাতাল ও থানার ফোন নম্বর হাতের কাছে রাখুন।
৩. যথাযথ শীতের পোশাক সাথে রাখুন।
৪. যে স্থানে ভ্রমণ করতে যাবেন সেই স্থানের যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগেই জেনে নিন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন