WHAT'S NEW?
Loading...

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড মূল্যায়ন

                                                                   






অবশেষে আসন্ন টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের  স্কোয়াড ঘোষিত হলো। মোটামুটি প্রত্যাশিত স্কোয়াডই ঘোষণা করা হয়েছে। টাইগার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে বড় কোন চমক নেই।চমক বলতে শুধু দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল এবারের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নেই। তাছাড়া অভিজ্ঞ পেসার রুবেল হোসেন ও অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাননি।অবশ্য এক্ষেত্রে এদের (রুবেল, মোসাদ্দেক) বিকল্প প্লেয়ার স্কোয়াডে রয়েছে যারা গত দুই তিন সিরিজে নিয়মিত পারফর্ম করছে যেমন পেসার শরিফুল ইসলাম ও ব্যাটসম্যান শামিম হোসেনের নাম এক্ষেত্রে বলা যায়। আসুন দেখে নিই কেমন হলো  বাংলাদেশের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড ।


স্কোয়াডের সবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে



এবারের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রায় প্রতিটি দলই শক্তিশালী।এর সাথে প্রায় সব দলেই এক বা একাধিক তারকা ক্রিকেটার রয়েছে। এসবকিছু বিবেচনায় বলা যায় এবারের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।আর এসব বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে একটি ভালো বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেটি হলো এই স্কোয়াডের সবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একাধিক ম্যাচ খেলেছে।ফলে বাংলাদেশ দল এক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাবে।কারণ একেবারে আনকোরা প্লেয়ার দলে নেই এতে দলের কনফিডেন্স শুরু থেকেই ভালো থাকবে। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ, অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তাসকিন আহমেদ , লিটন দাস,সৌম্য সরকার,মোস্তাফিজ,আফিফ, সাইফুদ্দিন এরা প্রত্যেকেই ব্যাপকভাবে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার যা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডের একটি চমৎকার দিক। এছাড়া শরিফুল,শামিম হোসেন আন্ডারনাইটিন বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা তরুণ স্পিনার নাসুম আহমেদ সম্প্রতি বেশকিছু ম্যাচে পারফর্ম করেছে।ফলে সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড মোটামুটি প্রত্যাশিত হয়েছে সেকথা বলাই যায়।


ওপেনারদের উপর চাপ বাড়বে



দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল এবারের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই ফলে এটি বাংলাদেশ টিমের জন্য একটি ধাক্কা। তামিমের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দল এবার পাবে না।ফলে লিটন দাস,নাঈম শেখকে সম্ভবত টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে ওপেন করতে হবে।হয়তো সৌম্য সরকারও দু-একটি ম্যাচে ওপেন করবেন। তামিম বিহীন এই টিমের ওপেনার লিটন,নাঈমদের তাই এবার বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।স্টাইকরেট এবং পরিস্থিতির প্রত্যাশা দুই মিলিয়ে লিটন-নাঈমদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। তাছাড়া মুশফিক ও সাকিব দলের এই দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে তেমন কিছু করতে পারেননি এটিও ওপেনারদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে।যদিও বড় ইভেন্টে মুশফিক, সাকিবের মত অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা বরাবরই সফল। তবু বাংলাদেশের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো কিছু পেতে ওপেনারদের ফর্ম খুব গুরুত্বপূর্ণ ।অবশ্য মিরপুরের স্লো উইকেটেও নাঈম শেখ ও লিটন দাসকে সাম্প্রতিক দুই টিটুয়েন্টি সিরিজে বেশ সাবলিল দেখা গেছে।আশা করা যায় বিশ্বকাপের স্পোটিং উইকেটে  লিটন,নাঈমরা আরো ভালো করবেন।


মিডলঅর্ডার যেমন দেখছি



বাংলাদেশের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো কিছু পেতে হলে মিডলঅর্ডারকে ক্লিক করতেই হবে। টাইগার বিশ্বকাপ স্কোয়াডের মিডলঅর্ডারে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, সোহান,আফিফের মত অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা রয়েছেন।তবে এখানে মাহমুদুল্লাহ ও আফিফ ছাড়া বাকিদের সাম্প্রতিক ফর্ম মোটেও সন্তোষজনক নয়। সাকিব অবশ্য বল হাতে সাফল্য পেয়েছেন কিন্তু তাঁর ব্যাট গত দুই তিন সিরিজে তেমনভাবে কথা বলেনি। সুতরাং টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের টপঅর্ডার বেশ শক্তিশালী দেখালেও প্লেয়ারদের ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।তবে একটি কথা স্মরণ করলে কিছুটা আশাবাদী হতে হয় এবং কথাটি হচ্ছে সাকিব, মুশফিককে বলা হয় বড় ম্যাচের প্লেয়ার ।বড় ইভেন্টে ও বড় ম্যাচে সাকিব,মুশফিকের মত প্লেয়াররা সাধারণত জ্বলে উঠেন এবং সেইদিক থেকে টাইগার টপঅর্ডারকে নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। যদিও সবকিছুর হিসেব বিশ্বকাপ মাঠে গড়ালেই পাওয়া যাবে।



রুবেল,মোসাদ্দেকের বাদ পড়া



বলা হয় বাংলাদেশে জেনুইন ফাষ্টবোলার এশিয়ার অন্য দলগুলোর তুলনায় সংখ্যায় কম।আর জেনুইন ফাষ্টবোলারের শূন্যতা গোছাতে একসময় বাংলাদেশ দলের বড় ভরসা ছিলেন রুবেল হোসেন। তবে বাংলাদেশের এবারের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রুবেল হোসেনের জায়গা হয়নি।যদিও টাইগার স্কোয়াডে জেনুইন ফাষ্টবোলার হিসেবে তাসকিন আহমেদ রয়েছেন। এছাড়া শরিফুল ইসলামও জেনুইন পেস করতে পারেন। এখন দেখার বিষয় রুবেল হোসেনের বদলে এই দুজন পেস অ্যাটাকে কেমন ভূমিকা রাখতে পারেন। টিটুয়েন্টি ক্রিকেটে ভালো ব্যাটসম্যান হবার প্রধান দুটি শর্ত হলো এক.ভালো বিগহিট করতে পারা এবং দুই.উইকেটের চারপাশে শট খেলার দক্ষতা থাকা।এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ,আফিফ,সৌম্য ও লিটন সেরা ব্যাটসম্যান।এর বাইরে বাকিরা স্ট্রোকমেকার কিন্তু উইকেটের চারপাশে সমানভাবে দক্ষ নন। এবং এই দিক বিবেচনায় মোসাদ্দেক হোসেনকে লেট মিডল অর্ডারের জন্য রাখা যেত। তাছাড়া মোসাদ্দেক অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত ফিনিশার। সেইসাথে মোসাদ্দেকের একটি চমৎকার দিক হচ্ছে সে প্রায় সব ধরণের শট খেলতে পারে। যাহোক এখন দেখার বিষয় মোসাদ্দেকের বদলে দলে জায়গা পাওয়া শামিম হোসেন লেট মিডল অর্ডারে কেমন ব্যাট করেন।



পেস অ্যাটাক ঠিক আছে



বাংলাদেশের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে পেসার হিসেবে রয়েছেন মোস্তাফিজ, তাসকিন, শরিফুল ও সাইফুদ্দিন।যদিও জেনুইন পেস বোলার হিসেবে টাইগার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রয়েছেন দুজন  (তাসকিন ও শরিফুল)।অনেকের ধারণা ছিল রুবেল হোসেন হয়তো জায়গা পাবেন যদিও রুবেলকে শেষপর্যন্ত বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রাখা হয়নি। রুবেলকে বাদ দেয়ার পেছনে সম্ভবত মূল কারণ ছিল বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর টিটুয়েন্টি না খেলার বিষয়।এর ফলে ধরে নেয়া যায় যারা টিটুয়েন্টি দলে নিয়মিত পারফর্ম করছেন তাদের উপরই নির্বাচকরা আস্থা রেখেছেন।আর এসব কিছু বিবেচনায় বলা যায় মোস্তাফিজের সাথে শরিফুল, তাসকিন, সাইফুদ্দিনের সমন্বয়ে বাংলাদেশের পেস অ্যাটাক কিছুটা ব্যালেন্সড প্রকৃতির হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের পেস অ্যাটাকে জেনুইন ফাষ্টবোলার ও সুইং বোলার দুইই রাখা হয়েছে।



স্পিনে অভিজ্ঞ সাকিব ও অন্যরা



বাংলাদেশের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সাকিবের মত একজন গ্ৰেট টিটুয়েন্টি স্পিনার এখানে রয়েছে। সাকিব এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক টিটুয়েন্টি ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। সুতরাং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো বলা যায়। এছাড়া টাইগার টিটুয়েন্টি স্কোয়াডে তরুণ স্পিনার নাসুম আহমেদ রয়েছেন। সেইসাথে অকেশনাল স্পিনার হিসেবে রয়েছেন মাহমুদুল্লাহ,আফিফ।এরা দুজন ব্রেকথ্রো স্পিনার হিসেবে বেশ সফল।এদিক থেকে বাংলাদেশের স্পিন অ্যাটাক বেশ শক্তিশালী হয়েছে বলা যায়।


তিন অলরাউন্ডার প্রসঙ্গ



টিটুয়েন্টি ক্রিকেটে সফলতার জন্য চৌকস অলরাউন্ডার খুব প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে মূল অলরাউন্ডার তিনজন (সাকিব, সাইফুদ্দিন,আফিফ)।বাকিরা যেমন সৌম্য, মাহমুদুল্লাহ উইকেট ও পরিস্থিতির প্রয়োজনে অলরাউন্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। যদিও গত দুই তিন সিরিজে সাকিবের বোলিং ভালো হচ্ছে কিন্তু ব্যাটে রান নেই আবার আফিফ ব্যাটিং ভালো করছেন কিন্তু বোলিংয়ের সুযোগ পাননি। সাইফুদ্দিন ব্যাট হাতে সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে  বড় রান করতে পারেননি।এখন দেখার বিষয় বিশ্বকাপ মাঠে গড়ালে বাংলাদেশের অলরাউন্ডাররা কেমন করেন।



তবু সম্ভাব্য সেরা স্কোয়াড হয়েছে



ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং মিলিয়ে বাংলাদেশের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড মোটামুটি প্রত্যাশিত হয়েছে বলা যায়।যদিও ওপেনিংয়ে তামিমের অবর্তমানে লিটন,নাঈম,সৌম্যরা কতটুকু মুন্সিয়ানা দেখাতে সক্ষম হন সেটি অবশ্যই ভাবনার বিষয়। তাছাড়া বেশকিছু তরুণ ক্রিকেটার এবার টাইগার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন যাদের উপর বাংলাদেশের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে। সবকিছুর পর এটুকু বলতে হবে যে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে এবার কিছুটা ব্যালেন্স রাখা হয়েছে যেখানে অভিজ্ঞদের সাথে সাম্প্রতিক সময়ে ভালো করা বেশকিছু তরুণ ক্রিকেটার রয়েছে।


বাংলাদেশের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড


মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাঈম শেখ, আফিফ হোসেন,নুরুল হাসান সোহান, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ সাইফুদ্দিন,শরিফুল ইসলাম,নাসুম আহমেদ,শেখ মাহেদি হাসান।


স্ট্যান্ডবাই : রুবেল হোসেন, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব

লিখেছেনঃ প্রভাকর চৌধুরী