প্রিয় ক্রিকেট ডটকমঃপ্রায় একাই ম্যাচকে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য রাখেন এমন বোলার ক্রিকেটে কালেভদ্রে দেখা যায়।সেই শেন ওয়ার্ন , মুরালিধরন থেকে হালের মিশেল স্টার্ক,বুমরা পর্যন্ত ক্রিকেটে তেমন বোলার খুব কমই পাওয়া যায়।আবার অনেক প্রতিভাবান বোলার ইনজুরি বা অন্য কারণে শেষপর্যন্ত সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি।তবু যারা ক্যারিয়ার জুড়েই ক্রিকেট মাঠে অসংখ্য ম্যাচজয়ের নায়ক হয়েছেন ক্রিকেটের তেমনি পাঁচ বিস্ময়কর বোলারের গল্প এখানে তুলে ধরব।
শেন ওয়ার্ন
ক্রিকেটে একজন বোলারের ভালো বোলিংয়ের সাথে বুদ্ধিমওাও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এবং ক্রিকেটে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও চৌকস বোলারের প্রসঙ্গ এলে শেন ওয়ার্নের নামটি বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হয়। দুর্দান্ত লেগস্পিন সেইসাথে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ভেলিভারি এই বোলারকে দিয়েছে সর্বকালের সেরা লেগস্পিনারের খ্যাতি।অষ্ট্রেলিয়ার তুলনামূলক বাউন্সি এবং গতির উইকেটে শেন ওয়ার্নের এমন বিশ্বমানের স্পিন সত্যিই এক ধাঁধা।অবশ্য ক্রিকেট অনিল কুম্বলে,শহিদ আফ্রিদির মত আরো বেশকিছু মেধাবী লেগস্পিনার দেখেছে ।তবে শেন ওয়ার্নের মত বিচিত্র প্রতিভার লেগস্পিনার ক্রিকেটে খুবই কম।ওয়ার্নের উইকেটসংখ্যা এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য। ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা বোঝে সঠিক জায়গায় বল ফেলার দক্ষতা ওয়ার্নের বোলিংয়ের বড় বিশেষত্ত্ব ছিল। লারা, শচীন, জয়াসুরিয়া, দ্রাবিড়ের মত সেরা টেকনিকের ব্যাটসম্যানরা শেন ওয়ার্নকে সমীহ করে খেলতেন এবং এখনও এসব ব্যাটসম্যানের বিভিন্ন কথপোকথনে বিষয়টি জানা যায় ।ব্যাটসম্যানকে প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে উইকেট নিতে পছন্দ করতেন ওয়ার্ন।এছাড়া লেগস্পিনকে রীতিমতো একটি নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছিলেন এই কিংবদন্তি লেগস্পিনার।
শেন ওয়ার্নের ক্যারিয়ার
শেন ওয়ার্ন তাঁর ক্যারিয়ারে ১৪৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন যেখানে তাঁর উইকেটসংখ্যা ৭০৮।৩৭বার ম্যাচে ৫ উইকেট ও ১০ বার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন এই তারকা বোলার।
শেন ওয়ার্ন ১৯৪টি ওয়ানডে খেলেছেন যেখানে তাঁর মোট উইকেট সংখ্যা ২৯৩।১বার ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন এই তারকা লেগস্পিনার।তবে শেন ওয়ার্ন কোন আন্তর্জাতিক টিটুয়েন্টি খেলেননি।
মুওিয়া মুরালিধরন
ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত অফস্পিনারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার মুওিয়া মুরালিধরন এক বিশিষ্ট নাম।বিশেষ অ্যাকশনের জন্য ক্রিকেটে আলোচিত ছিলেন এই তারকা বোলার। যতদিন খেলেছেন ততদিন সব প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের জন্য এই তারকা স্পিনার বড় মাথাব্যথার কারণ ছিলেন। কার্যকর স্পিনের সাথে বলের উপর চমৎকার নিয়ন্ত্রণ রাখার অপূর্ব দক্ষতা ছিল মুওিয়া মুরালিধরনের বোলিংয়ে। এসবের ফলে ব্যাটসম্যানরা তাঁর বল খেলতে সমস্যায় পড়তেন। মুরালিধরন শ্রীলঙ্কাকে বহু ম্যাচে একাই জিতিয়েছেন। মুরালিধরনের মত সফল অফস্পিনার ক্রিকেটে খুব কমই পাওয়া যাবে। নিখুঁত টাইমিং ও টেকনিক এ দুটি বৈশিষ্ট্য ছিল এই লংকান গ্ৰেটকে খেলার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা । রেকর্ডের দিকে তাকালে দেখা যায় শচীন,লারা, পন্টিং,দ্রাবিড়, আশরাফুলের মত উন্নত টেকনিকের ব্যাটসম্যানরাই শুধু মুরালিকে খেলতে সফল হয়েছেন।মুরালিধরনের মত প্রতিভাবান অফস্পিনার ক্রিকেটে সহসা পাওয়া যায় না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো মুরালিধরনের মত ম্যাচকে একাই নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য ক্রিকেটে খুব কম বোলারই পেরেছেন।
মুওিয়া মুরালিধরনের ক্যারিয়ার
মুওিয়া মুরালিধরন তাঁর ক্যারিয়ারে ১৩৩টি টেস্ট খেলে ৮০০ উইকেট নিয়েছেন।যেখানে ৬৭বার ম্যাচে ৫ উইকেট ও ২২বার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন।
মুরালিধরন ৩৫০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে মোট ৫৩৪টি উইকেট নিয়েছেন যেখানে ১০বার ম্যাচে ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ড রয়েছে। মুরালিধরন ১২টি আন্তর্জাতিক টিটুয়েন্টি খেলে ১৩ উইকেট নেন।
লাসিথ মালিঙ্গা
বলা হয় ক্রিকেটে নিখুঁত ইয়র্কারের জন্য বিখ্যাত বোলারদের মধ্যে লাসিথ মালিঙ্গা এক অনন্য উদাহরণ।কারণ লাসিথ মালিঙ্গার বলে অন্য সবগুণের মধ্যে ইয়র্কারের কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি। এবং ইয়র্কারের ক্ষেএে সঠিক জায়গায় বল ফেলার এক অপূর্ব দক্ষতা মালিঙ্গার বোলিংয়ে লক্ষ করা যায়। তাছাড়া ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা বোঝে সঠিক ডেলিভারি মালিঙ্গার বোলিংয়ের এক বড় বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃত। ক্রিকেটের ইতিহাসে অসাধারণ গতিতারকার সংখ্যা নেহাত কম নয় তবু মালিঙ্গার মত পেস বলের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ খুব কম বোলারই দেখাতে পেরেছেন।ব্রেট লি,মিশেল জনসন, শোয়েব আখতার,শেন বন্ড,ডেল স্টেইনের মত অসাধারণ সব পেসার ক্রিকেটে এসেছেন তবু মালিঙ্গার মত কার্যকর ভেরিয়েশন ও নিখুঁত ইয়র্কার খুব কম পেসার দেখাতে পেরেছেন। এবং লাসিথ মালিঙ্গার মত একাই ম্যাচকে নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা খুব কম পেসারের বেলায় দেখা যায়।আর এসব কিছু বিবেচনায় এই লংকান পেসারকে ক্রিকেটের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার বলা যায়।
লাসিথ মালিঙ্গার ক্যারিয়ার
লাসিথ মালিঙ্গা ৩০টি টেস্ট খেলেছেন যেখানে তাঁর মোট সংগ্রহ ১০১ উইকেট।এই তারকা বোলার ৩বার ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন। মালিঙ্গা ২২৬টি ওয়ানডে খেলেছেন যেখানে তাঁর মোট সংগ্রহ ৩৩৮ উইকেট। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই পেসার ৮বার ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া লাসিথ মালিঙ্গা ৮৩টি টিটুয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১০৭টি উইকেট নিয়েছেন যেখানে ২বার ম্যাচে ৫ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব রয়েছে।
মিশেল স্টার্ক
ক্রিকেটের ইতিহাসে অষ্ট্রেলিয়ার বেশকজন পেসার তাদের অনন্য প্রতিভার জন্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এক্ষেত্রে গ্লেন ম্যাকগ্রা,ব্রেট লি, মিশেল জনসন, মিশেল স্টার্ক,প্যাট কামিন্সের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়।তবে বুদ্ধিদীপ্ত ভেলিভারি ও কার্যকর ভেরিয়েশন বিবেচনায় মিশেল স্টার্ক এক্ষেত্রে বিশিষ্ট এক পেসার। তাছাড়া ম্যাচকে একাই নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য বিবেচনায় মিশেল স্টার্ক এক অতুলনীয় পেসার।তাই ক্রিকেটের বিস্ময়কর প্রতিভার পেসারদের প্রসঙ্গ এলে মিশেল স্টার্কের নামটিও উচ্চারিত হয়। একজন ফাস্টবোলারের মূল শক্তি গতি ও সুইং এবং এক্ষেত্রে সফল উদাহরণ হিসেবে মিশেল স্টার্কের নাম করা যায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো স্টার্ককে খেলতে হলে ভালো টেকনিকের সাথে নিখুঁত ডিফেন্স খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মিশেল স্টার্কের ক্যারিয়ার
মিশেল স্টার্ক ইতিমধ্যে ৬১টি টেস্ট খেলেছেন যেখানে তাঁর মোট উইকেট সংখ্যা ২২৫টি।ম্যাচে ১৩ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন এবং ২বার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন।
মিশেল স্টার্ক ৯৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন যেখানে তাঁর সংগ্রহ ১৮৪ উইকেট।৭বার ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন এই তারকা পেসার। এছাড়া ৩৫টি আন্তর্জাতিক টিটুয়েন্টি খেলে ৪৭টি উইকেট নিয়েছেন স্টার্ক।
জাসপ্রিত বুমরা
হিসেবী পেসবোলার ক্রিকেটে খুব কম দেখা যায়।আর পেসারদের ক্ষেএে সবসময় হিসেবী হওয়ার উপায় নেই। ভারতীয় ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের একটি শূন্যতা ছিল যে তাদের বিশ্বসেরা ফাষ্টবোলার নেই। কিন্তু সেই শূন্যতাকে পূরণ করেছেন এবং সেই সাথে ভারতকে পেস বোলিং দিয়ে দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছেন দুজন পেসার। এর প্রথমজন জাসপ্রিত বুমরা ও দ্বিতীয় জন মোঃ সামি।তবে বলের গতি ,ম্যাচকে নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা, অসাধারণ সব ইয়র্কার ইত্যাদি বিবেচনায় জাসপ্রিত বুমরার কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। বুদ্ধিদীপ্ত ভেলিভারির প্রসঙ্গ এলে এ সময়ের ক্রিকেটে জাসপ্রিত বুমরা এক অতুলনীয় নাম।আমরা বুমরার বোলিং বিশ্লেষণ করলে বেশকিছু বৈশিষ্ট্য পাই যা সত্যিই অবিশ্বাস্য।বুমরার বোলিংয়ের মূলশক্তি গতি, সঠিক ভেলিভারি এবং আত্মবিশ্বাস। এসবকিছুর সমন্বয়ে জাসপ্রিত বুমরাকে ক্রিকেটের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
জাসপ্রিত বুমরার ক্যারিয়ার
জাসপ্রিত বুমরা ইতিমধ্যে ১৭টি টেস্ট খেলেছেন এবং তাতে তাঁর সংগ্রহ ৭৯ উইকেট।৫বার ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন।
বুমরা ৬৭টি ওয়ানডে খেলেছেন যেখানে তাঁর উইকেটসংখ্যা ১০৮।এই তারকা পেসার ওয়ানডে ক্রিকেটে ১বার ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন।বুমরা ৪৯টি টিটুয়েন্টি খেলেছেন যেখানে তাঁর উইকেটসংখ্যা ৫৯।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন