প্রিয় ক্রিকেট ডটকমঃ এইসএসসির ফল প্রকাশিত হয়েছে।এখন উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভাবার মূল সময় এসেছে।তবে আশার খবর হলো দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বেড়েছে।এখন সামর্থ্য থাকলে উচ্চশিক্ষা নেয়া খুব কঠিন কিছু নয়।দেশে সাধারণ ও বিশেষায়িত দুই ধরণের উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।দেশে উচ্চশিক্ষার মূল দুই ধারা হচ্ছে যথাক্রমে জ্ঞানভিওিক ও কর্মমুখী উচ্চশিক্ষা।আর উচ্চশিক্ষার চিন্তা শুরুর আগে সিদ্ধান্ত গ্রহন গুরুত্বপূর্ণ। এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কিছু বিষয় জেনে নিতে হবে।এইসএসসির পর উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন খুটিনাটি নিয়ে এ লেখা।
নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানুনঃ উচ্চশিক্ষায় ভর্তির আগে নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন হোন।এতোদিন যেভাবে পড়েছেন উচ্চশিক্ষা এ থেকে অনেকটাই ভিন্ন। এখানে বিষয় নির্বাচন থেকে আবাসন, আর্থিক সামর্থ্য অনেককিছু নিয়ে ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া নিজের আগ্রহ এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর আগ্রহ থাকলে উচ্চশিক্ষা খুব কঠিন কিছু নয়।
জ্ঞানভিওিক না কর্মমুখী উচ্চশিক্ষাঃ আপনি জ্ঞানভিওিক বা কর্মমুখী বিষয়ে হায়ার এডুকেশন/উচ্চশিক্ষা নিতে পারেন। তবে তার আগে চাই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন। জ্ঞানভিওিক উচ্চশিক্ষা মানে মানবিক(সাহিত্য,ইতিহাস,সমাজবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি)ও বাণিজ্য(বিবিএ ইত্যাদি) বিষয়ক। কর্মমুখী উচ্চশিক্ষা মূলত বিজ্ঞানের ছাএদের জন্য(প্রকৌশল,মেডিকেল,কৃষিবিষয়ক)। দুধরণের উচ্চশিক্ষাই ভালো তবে আপনাকে যেকোন একটি বেছে নিতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক উচ্চশিক্ষার জন্য সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে আর কর্মমুখী উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়।
সঠিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচনঃঃ উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো প্রতিষ্ঠান নির্বাচন জরুরি।যেখানে ভালো শিক্ষক রয়েছেন এবং পড়াশোনার মান যেখানে ভালো তেমন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তির চেষ্টা করুন।এছাড়া আবাসন সুবিধা আছে কিনা জেনে নিন।যাতায়াত সুবিধা কেমন তা জেনে নিন।
কঠোর পরিশ্রমের ইচ্ছাঃ বাংলাদেশের বাস্তবতায় বলা যায় এখানে উচ্চশিক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রমের আগ্রহ থাকতে হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রমের ক্ষমতা ও সদিচ্ছা থাকতে হবে।
আর্থিক সামর্থ্যঃ উচ্চশিক্ষার জন্য মেধার সাথে কিছু আর্থিক সামর্থ্যও থাকতে হবে।বিশেষত উচ্চশিক্ষার প্রথমদিকে আর্থিক সাপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তির আগে এসব বিষয় স্পষ্ট বুঝে নিতে হবে।আর্থিক প্রিপারেশন ছাড়া উচ্চশিক্ষার চিন্তা করা কিছুটা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
কী পড়বেন কেন পড়বেন
বলা হয় শিক্ষার জন্য ইচ্ছা শক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে তার আগে চাই নিজের লক্ষ্য ও পছন্দের বিষয় সম্পর্কে জানা।নিজের আগ্রহের পথে উচ্চশিক্ষার সিদ্ধান্ত নিলে সফলতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।আবার এমনও আছে প্রথমদিকে কোন বিষয় জটিল মনে হবে এবং সময়ের সাথে সাথে সেটি হয়ে উঠবে প্রিয় এক আশ্রয়।তাই উচ্চশিক্ষার আগে চাই কী পড়বেন কেন পড়বেন তা ভালো করে জেনে নেয়া।উচ্চশিক্ষার জন্য সাধারণ (থিওরিটিক্যাল) বিষয় বেছে নিতে পারেন।সেখান থেকে বিচারক, শিক্ষক, আমলা,ব্যাংকার,গবেষক,আইনজীবী, ব্যবসায়ী ইত্যাদি হতে পারবেন।আবার কর্মমুখী উচ্চশিক্ষা নিয়ে হতে পারেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,গবেষক, বিজ্ঞানী ইত্যাদি।
সাধারণ স্নাতক ডিগ্রি
এইসএসসি পাশের পর দেশে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চারবছর মেয়াদি স্নাতক (বিজ্ঞান,মানবিক,বাণিজ্য) কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন।এছাড়া দেশের প্রায় সব জেলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে চারবছর মেয়াদি (বিজ্ঞান, মানবিক,বাণিজ্য) স্নাতক কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান,মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হতে পারেন।তবে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় সেখানে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হবে।সেইসাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে খরচ কম হবে।তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়তে চাইলে খরচ বেশি পড়বে। তাছাড়া অনেক নামী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি /কৃষিবিদ
দেশে এইসএসসির পর উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।রাষ্ট্রের উন্নয়নে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের সরাসরি অবদান আছে ।এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও কৃষি বিষয়ক চারবছর মেয়াদি স্নাতক কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।তবে সেখানে ভর্তিপরীক্ষায় বসতে হবে।আর এসব ডিগ্রী নিয়ে দেশ-বিদেশে চাকরির সুযোগ পাবেন।
চিকিৎসা শিক্ষা
সরাসরি মানবসেবার জন্য সম্মানজনক ও আদর্শ এক পেশা হচ্ছে ডাক্তারি।আর ডাক্তার হতে হলে লাগবে এমবিবিএস ডিগ্রি। এইসএসসি পাশের পর প্রয়োজনীয় সব শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।তবে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় সেখানে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভর্তিপরীক্ষায় বসতে হবে।সরকারি মেডিকেলে পড়তে খরচ পড়বে কম।তাছাড়া আরও কিছু সুবিধা পাবেন।তবে প্রাইভেট মেডিকেলে পড়তে খরচ পড়বে অনেক।
নার্সিং ডিগ্রি
এইসএসসির পর বিশেষত মেয়েদের জন্য এক আদর্শ পেশা নার্সিং।নার্সিং ডিগ্রির জন্য্য দেশে বেশকিছু সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং কলেজ রয়েছে। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে নার্সিং ডিগ্রির জন্য ভর্তি হতে পারেন।তবে নার্সিং কোর্সে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইসএসসি পাশ হতে হবে।নার্সিং ডিগ্রির পর প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে সরকারি/বেসরকারি খাতে দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ পাবেন।
মার্চেন্টডাইজিং ও ফ্যাশন ডিজাইন
পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির বড় এক চালিকাশক্তি। তাছাড়া এখানে রয়েছে মিড লেভেলের বিপুল জব।তবে এখাতে ভালো চাকরি পেতে হলে লাগবে মার্চেন্টডাইজিং ও ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি। এইসএসসি পাশের পর এসব বিষয়ে স্নাতক পড়তে পারেন।এ বিষয়ে স্নাতক পাশ করে দেশ ও দেশের বাইরে বিপুল চাকরির সুযোগ রয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
এইসএসসির পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সরাসরি কাজ করার জন্য করতে পারেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক কোর্স।এখানে সার্টিফিকেটের পাশাপাশি যথাযথ দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপক কাজের সুযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়টি পড়ানো হয়ে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা
এইসএসসির পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারেন।বিশ্বের বিভিন্ন নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে নিতে পারেন বৈশ্বিক শিক্ষার স্বাদ।বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃওির জন্য আবেদন করতে পারেন।এজন্য পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করলে সব তথ্য পাবেন।এছাড়া দৈনিক প্রথমআলো পএিকার "স্বপ্ননিয়ে" (swapno@prothomalo.com)পেজটি নিয়মিত ভিজিট করলে এ বিষয়ে অনেক তথ্য পাবেন।
এ সময়ের জনপ্রিয় বিষয়
এই সময়ে উচ্চশিক্ষার জনপ্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং,চিকিৎসা শিক্ষা, আর্কিটেকচার,ফার্মেসি,বিবিএ,আইন,হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।এখন উচ্চশিক্ষার জন্য উপরিউক্ত বিষয়গুলোর চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি।
ইঞ্জিনিয়ারিং
এখনকার পৃথিবী ব্যাপকভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি উপর নির্ভরশীল।আর সব প্রযুক্তির কারিগর হচ্ছেন ইঞ্জিনিয়াররা।টেলিভিশন থেকে কেমিকেল প্রযুক্তি সবকাজের জন্য ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা ব্যাপক।ফলে ইঞ্জিনিয়ারিং এ সময়ের উচ্চশিক্ষার বাজারে সবচাইতে জনপ্রিয়।
চিকিৎসাশিক্ষা
এ সময়ের উচ্চশিক্ষার বাজারে চিকিৎসা শিক্ষার চাহিদা ব্যাপক।দেশ ও বিদেশে বিপুলসংখ্যক দক্ষ চিকিৎসকের চাহিদা রয়েছে।আর এজন্য চিকিৎসা বিষয়ে নিতে হবে উচ্চশিক্ষা।
আর্কিটেকচার
দক্ষ আর্কিটেকট ছাড়া কোন টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব নয়।আর এজন্য দরকার আর্কিটেকচার বিষয়ে উচ্চশিক্ষা। আর্কিটেকচার এ সময়ের উচ্চশিক্ষার জনপ্রিয় এক বিষয়। এ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে দেশ ও বিদেশে ব্যাপক কাজের সুযোগ রয়েছে।
ফার্মেসি
দেশে ও বিদেশে ঔষুধ শিল্পের প্রসার দিনদিন বাড়ছে। আর ঔষধ শিল্পের জন্য ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীর চাহিদাও বাড়ছে। এ সময়ের জনপ্রিয় এক পেশা উচ্চতর ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্ট।দেশে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এইসএসসি পাশের পর ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিবিএ
দেশ ও বিদেশে আর্থিক খাতে ব্যাংক,বীমা,শিল্পকারখানা ইত্যাদির ম্যানেজমেন্ট পরিচালনার জন্য ব্যাপক সংখ্যক বিবিএ ডিগ্রিধারী গ্রেজুয়েটের চাহিদা রয়েছে। এ সময়ের উচ্চশিক্ষার বাজারে বিবিএ ডিগ্রির চাহিদা ব্যাপক।এইসএসসির পর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ার সুযোগ রয়েছে।
আইন
মানুষের আইনগত অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য পড়তে পারেন আইন। আইন পড়ে সরকারি চাকরি ছাড়াও স্বাধীনভাবে আইনজীবী হিসেবে ব্যাপক কাজের সুযোগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুবিধা রয়েছে।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট
হোটেল ম্যানেজমেন্ট এ সময়ের উচ্চশিক্ষার এক জনপ্রিয় বিষয়। তবে এ পেশায় যুক্ত হতে লাগবে হোটেল ম্যানেজমেন্ট এন্ড ট্যুরিজম বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়টি পড়ানো হয়।এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন